চোখ আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি

চোখ আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি


চোখ আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি

চক্ষু, চোখ, লোচন, নয়ন, নেত্র, অক্ষি, আঁখি। আরবিতে বলে আইনুন। আরবি আইনুনের ১০০ অর্থ আছে। আবার চোখের আরবিও অসংখ্য।
হিন্দিতে আঁখ ও নাইন বেশি ব্যবহার হয়। ইংরেজরা বলে আই। ফারসিতে বলে চশমো। আবার উর্দুুতে চশমা মানে ঝরনা। বাংলায় চশমা চোখের গ্লাসকে বলা হয়। ভাষার কারিকুরি অদ্ভুত, আবার মজাদারও। জাপানি ভাষায় চোখকে মে বলে। চায়নিজরা চোখকে বলে ইয়েনজিং। ফরাসি ভাষায় চোখকে লই বলে।
জার্মানরা কী বলে জানেন? ডাস আউগা। ইতালিয়ানরা বলে লোকিউ।

চোখের কাজ কী?
মানবদেহের পরিচালনা করে মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কে তথ্য সরবরাহ করে অনেক সেন্টার। এর মধ্যে চোখ অন্যতম। চোখ দেখে, বহুদূর পর্যন্ত অবজারভ করে মস্তিষ্কের কাছে তথ্য পৌঁছায়। চারপাশের দৃশ্যাবলি চোখের সহায়তায় মস্তিষ্কে দৃশ্যকরণ করে তথ্য পাঠায়। মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে চোখের বিশাল ভূমিকা রয়েছে।
ডিএইসএলআরের সক্ষমতা কত ফিক্সেল? আমাদের চোখের পরিষ্কার সক্ষমতা ৫৭৬ মেগাপিক্সেল। উন্নত ক্যামেরা আঁধার রাতের ছবি ক্লিয়ার করতে পারে না। আপনি কিন্তু অন্ধকারে পরিষ্কার না হলেও বোধগম্য চিত্র দেখতে পারেন। এটাই সুপারপাওয়ার চোখের কারিশমা।
চোখের আরেক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, চোখে ঘুম নামে। ঘুমের মাধ্যমে আমরা ক্লান্তি কাটিয়ে সজীবতায় ফিরি।
জান্নাতে ঘুম থাকবে না। চোখ বড় করার কিছু নেই। জান্নাতে শ্রান্তি-ক্লেশ থাকবে না। ঘুমের দরকার নেই। তবু আপনার ঘুমের খায়েশ হলে, আয়েশ করে ঘুমাতে পারবেন।
চোখে যথাযথ ঘুম না হলে শরীর অস্বাভাবিক হয়। চেহারা, শরীর ও মন তছনছ হয়ে যায়। চোখের কোণে কালি জমে। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়।
চোখের আরেক বৈশিষ্ট্য, চোখ কাঁদে। আমাদের মন বিষণ্ন ও বিধ্বস্ত হলে চোখে অশ্রু নামে।
যদি চোখের অশ্রু ব্যবস্থাপনা না থাকত, মানুষ দুঃখে মরে যেত। কিছু কিছু কষ্টের প্রশমন অশ্রু ছাড়া সম্ভবপর নয়।
চোখের জলজ ব্যবহার আমাদের মনকে হালকা করে। আল্লাহর কাছে পাপবোধের অশ্রু বেশি মূল্যবান।
তওবার সময় গড়িয়ে পড়া অশ্রুধারা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির পরিপুষ্ট কমল।
এক প্রিয় মানুষের ভাবনা, যে চোখ কাঁদে না, তা কম সুন্দর। আসলেই অশ্রু চোখ ধুয়ে দিলে বর্ষা ধোয়া সবুজাভ পত্রের মতো লাগে নেত্রপল্লব।
চোখ মানবদেহের অন্যতম সুন্দর অঙ্গ। পৃথিবীর সব সাহিত্যে চোখের বিপুলকায় বর্ণনার ছড়াছড়ি।
চোখের তারা, ভ্রু, পাপড়ি, পাতার সৌন্দর্য ও রূপ বিশ্লেষণ করতে করতে সাহিত্যিকরা ক্লান্ত। তবু চোখের সুষমাময় ব্যাখ্যা শেষ হয় না।
খ্যাত গীতি। বলা হয় মুখের কথার চেয়ে চোখের কথা গভীরতর।
চোখের সৌন্দর্যের সঙ্গে চোখের ভাষা আছে। এ ভাষা বেশ সমৃদ্ধ। মুখের ভাষার চেয়ে শক্তিশালী। কিছুটা জটিলও বটে।
চোখের চাহনি, ইশারা ও ওঠা-নামায় ব্যাপক অর্থ থাকে।
মুখের ভাষা সুসংগঠিত। চোখের ভাষা বৃষ্টির মতো এলোমেলো। চোখের ভাষা বুঝতে ও বোঝাতে মানুষ হরদম ভুল করে। চোখ নিমিষেই সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে। কোরআন বলছে, ‘...তারা যেন তাদের তীক্ষ দৃষ্টি দিয়ে তোমাকে আছড়িয়ে ফেলবে...।’ (সুরা : ক্বলাম, আয়াত : ৫১)
ফারসিতে প্রবাদ আছে, শাইখের সুনেত্রে শিষ্যের পাথেয় হয়ে যায়।
চোখের ভাষা এত ব্যাপক, অভিধান তা সংকুলান করতে পারে না।
চোখের কারকুন জানা নারীর কৌশলজালে কত পুরুষ বিলীন হয়েছে জানা নেই। পুরুষও কম যান না।
আই কন্টাক্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গোয়েন্দারা মুখের ভাষার চেয়ে চোখের কথা বেশি লক্ষ করেন।
মুখে মিথ্যা বলা সহজ, চোখের ভাষায় মিথ্যার মিশ্রণ কঠিন। কারো ভাষার সঠিকতা বুঝতে চাইলে চোখে চোখ রাখুন।
মানুষ চোখে চোখ রেখে মিথ্যা বলতে পারে না। অথবা কম পারে।
রাসুল (সা.) চোখে চোখ রেখে সজীব ও সহজ করে কথা বলতেন। এটা সুন্নত।
চোখের মাঝ দিয়ে আমরা আল্লাহকে চিনি, বুঝি ও ভাবি।
চোখ মহান আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি। কোরআনের ইঙ্গিত দেখুন : ‘আমি (আল্লাহ) কি তার জন্য সৃষ্টি করিনি দুই চোখ?’ (সুরা : বালাদ, আয়াত : ৮)
চোখের মাধ্যমে সৃষ্টির সৌন্দর্য দেখার কথা যেমন কোরআন মজিদ বলেছে, তেমনি চোখকে নাজায়েজ ও ক্ষতিকর বিষয় থেকে সরিয়ে রাখার কথাও কোরআন বলেছে।
মানুষ একসময় ভাবত, চোখের বিকিরণ বস্তুতে গেলে বস্তু দৃশ্যমান হয়।
মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনু হাইশাম এসে এই ভ্রান্তি দূর করেন। তিনি চশমার উদ্ভাবক। আমাদের চোখে বস্তুর আলো এসে পড়লে আমরা তা দেখি। তাহলে অন্ধত্ব কী? বস্তুর আলো গ্রহণ করার অক্ষমতা। এ জন্য আকাশপটে তারা যখন দেখি তা মিনিমাম পাঁচ মিনিট আগের তারা। কারণ কমপক্ষে পাঁচ মিনিট লাগে তারার আলো চোখের তারায় এসে পড়তে। বহু তারার আলো আজও পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়নি। নীহারিকাপুঞ্জ বহু সুদূরে অবস্থিত।
চোখের ভাষার ব্যবহারে সমঝদার হওয়া উচিত। চোখে সংযম রাখা ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। চোখের অপব্যবহার মানুষের ভেতর-বাইর নষ্ট করে দিতে পারে। কিছু কিছু চোখ গোলাপের মতো পবিত্র, লাজুকলতার মতো সলাজ। কিছু চোখ বেহায়া ও বীতশ্রদ্ধ।
চেহারার সৌন্দর্যের এক আজব কারিগর চোখ। ডাগর চোখে ভ্রমর ভ্রু হলে দেখতে ভালো লাগে।
চোখ সুন্দর মানুষের কান্না পর্যন্ত সুন্দর। তারা হাসলে চোখের চৌপাড় হেসে কুটিকুটি হয়।
চোখ মানুষকে বোঝার বিশেষ শাখা। কারো চোখের দিকে গভীরভাবে তাকালে তার অবস্থা বোঝা যায়।
মাতা-পিতা চোখের দিকে তাকিয়ে সন্তানের সুখ-দুঃখ বুঝে ফেলেন।
আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) চোখে সুরমা দিতেন। এটা সুন্নত। ভ্রু কাটাকাটি অপছন্দনীয় কাজ। পৃথিবীর সৃষ্টির সুন্দরতম মানুষ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর চোখও পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর চোখ।
কিছু চোখ আল্লাহকে চেনার জন্য দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। আল্লাহর নিখুঁত সৃষ্টি অবলোকন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এমন চোখ সম্পর্কে কোরআন বলছে, ‘যিনি স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন সপ্তাকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাবে না। তুমি আবার তাকিয়ে দেখো, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি?
অতঃপর তুমি বারবার দৃষ্টি ফেরাও, সে দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ৩-৪)
যে চোখ আল্লাহকে চেনে না, সে হতভাগা চোখ। যে চোখ আল্লাহকে মানে না, সে অভিশপ্ত চোখ।
যে চোখ ওহির জ্ঞান বঞ্চিত, সে চোখ অবাঞ্ছিত। যে চোখে মানুষের জন্য অশ্রু নেই, মানবতার জন্য শিশির নেই, সেটি মরু চোখ। এমন চোখ থেকে আল্লাহর পানাহ চাই।
লেখক : রুকন ইনআম,  কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক
মাইক্রোসফট প্রজেক্ট সেটিংস

মাইক্রোসফট প্রজেক্ট সেটিংস

আপনাদের অনেকেই মাইক্রোসফট প্রজেক্ট ২০১৩ এর বিভিন্ন সেটিংস ব্যবহার করতে পারেন। নিচে দেখানো চিত্রের সাথে আপনার সেটিংস মিলিয়ে নিন । মনে রাখুন, সব সেটিংস  মাইক্রোসফট প্রজেক্ট এর প্রথমবার ইন্সটল করা ডিফল্ট সেটিংস হিসেবে থাকবে। প্রজেক্ট টি সাজাতে ও তথ্যপূর্ণ ফলাফল  পেতে নিচের মতো করে সাজাতে পারেন।
ধাপ ১ঃ প্রথমে File  এ ফাইলে যান তারপর Options  → General tab → Project view → Default view. তে ক্লিক করুন।  নিচের চিত্রের মতো আসবে।
Installing MSProject
Add caption
তারপর ড্রপডাউন বক্স থেকে “Gantt with Timeline” সিলেক্ট করুন।
Gantt Timeline
ধাপ ২ঃ তারপর আবার File থেকে Options → Display tab → Show Indicators and Options Buttons For. যান এবং টিক চিহ্ন দিন। নিচের চিত্র দেখুন----
Check Options
ধাপ ৩ঃ আবার File থেকে → Options → Schedule tab → Schedule → Show Assignment Units. এ যান এবং ড্রপডাউন বক্স থেকে পার্সেন্টেজ নির্ধারণ করুন।
Percentage
ধাপ ৪ঃ আবার File থেকে Options → Schedule tab → Calculation → Calculate Project after Each Edit এ যান। On button টি চেক রাখুন।
Check Button
ধাপ ৫ ঃ ফাইলটি সেভ করুন এভাবে ঃ File → Options → Save tab → Save projects । প্রজেক্টের নাম দিয়ে সেভ করুন।  আপনার প্রজেক্টটি (.mpp) extenstion দিন।
Select Project
ধাপ ৬ ঃ আবার File থেকে Options → Advanced tab → Edit . এ যান। সবগুলো অপশন টিক চিহ্ন দিন।
Check All

স্ক্রল বার দেখানোর জন্য (Show Scroll Bar):
আবার File এ যান। Options থেকে → Advanced tab → Display → Show Status Bar → Show Scroll Bar.
স্টেটাস বার (Status Bar) ও স্ক্রল বার (Scroll Bar) দেখানোর জন্য অবশ্যই টিক চিহ্ন দিন ।
Status Scroll
 ধাপ ৭ঃ Resources  এ যান → Level → Leveling Options → Leveling Calculations. ম্যানুয়াল এ টিক চিহ্ন দিন।
Set to Manual
Set Manual
ধাপ ৮ঃ আবার ও Resources → Level → Leveling Options → Leveling calculations  এ যেয়ে Overallocations. এ যান। । ড্রপডাউন বক্স থেকে “Day By Day” সিলেক্ট করুন।
DropDown


পূর্বের পৃষ্ঠা দেখুন                                                                                                       পরবর্তী পৃষ্ঠা দেখুন
মাইক্রোসফট প্রজেক্ট

মাইক্রোসফট প্রজেক্ট

মাইক্রোসফট প্রজেক্ট টিউটোরিয়ালঃ
মাইক্রোসফট প্রজেক্ট, মাইক্রোসফট এর একটি প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়ার। ইহা প্রজেক্ট ম্যানেজার এর জন্য একটি খুবই সহায়ক টুল, যা শিডিউল তৈরীতে, কাজে সম্পদ বন্টন, কাজের অগ্রগতি সনাক্ত করতে, বাজেট ব্যবস্থাপনার কাজে লাগে। তাছাড়া চলতি প্রজেক্ট কাজের চাপ ও এর পরিধি বিশ্লেষন করা যায়।
এই টিউটোরিয়াল এ এই সফটওয়্যার এর বিভিন্ন ফিচার সম্পর্কে সহজে বুঝার জন্য  উদাহরনসহ  আমরা আলোচনা করব ।


যাদের জন্য এই প্রজেক্ট

মূলত এই টিউটোরিয়ালটি প্রাথমিক পর্যায়ে যারা আছেন তাদের জন্য সহজবোধ্য করে সাজানো হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড এর  প্রজেক্ট ম্যানেজার এবং প্রজেক্ট প্ল্যানিং এ যারা আছেন, যারা মাইক্রোসফট প্রজেক্ট ব্যবহার করেন নি।  প্রজেক্ট  এর যে কোন সাইজ এর সিডিউল, পরিকল্পনা এবং রিপোর্ট এর জন্য  ২০১৩ ভার্ষণ ব্যবহার করতে পারেন । এই টিউটোরিয়ালটি মাইক্রোসফট প্রজেক্ট স্ট্যান্ডার্ড ফিচার  অনুসারে করা হয়েছে।


এই টিউটোরিয়ালটি শিখতে যা প্রয়োজেন

মাইক্রোসফট প্রজেক্ট শিখার জন্য কম্পিউটার  ও উইন্ডোজ এর উপর বেসিক জ্ঞান প্রয়োজন।
১। সাধারন অফিস পোগ্রাম ব্যবহার করা যায় এমন  ডেস্কটপ কনফিগারেশন।
২। মাইক্রোসফট প্রজেক্ট ২০১৩ ভার্সন।




কৌতুকেও নয় মিছে কথা

কৌতুকেও নয় মিছে কথা

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

lies3
লেখকঃ আলী হাসান তৈয়ব | সম্পাদনাঃ  ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
রিকশা থেকে নেমে মানি ব্যাগ খুলে ভাড়া দিতে গিয়ে হয়তো দেখলেন খুচরো দশ টাকা নেই। এবার কী করবেন? নিশ্চয় আপনি পাশের মুদির দোকানে গিয়ে বলবেন, ভাই একশ টাকা খুচরো হবে? মুহূর্ত বিলম্ব না করে দোকানি নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দেবেন, ‘না ভাই আমার কাছে কোনো খুচরো নেই’। অথচ সত্য হলো, তার ক্যাশে একশ টাকার খুচরো পর্যাপ্ত রয়েছে। তেমনি জিনিস কিনতে গিয়ে দেখবেন দোকানীরা দামদরের এক পর্যায়ে ক্রেতাকে পটাতে বলেন, ‘এটা আমি … দিয়ে কিনেছি। আপনাকে এই দামে দিলে আমার কোনো লাভই থাকে না ভাই।’ তারপর দিব্যি তিনি ওই তথাকথিত কেনা দামেই দিয়ে দেন। ক্রেতার মন ভেজাতে কেউ বলেন, ‘আপনাকে এই দামে বেঁচলে কেবল আমার চালানটা উঠবে ভাই’ কিংবা এটা আমার কেনা দাম, এরচে কম বলবেন না ইত্যাদি বাক্যও উচ্চারণ করেন।
আমাদের রোজকার জীবনে এমন অনেক মিথ্যে কথাই বলে থাকি যার তেমন কোনো প্রয়োজন নেই। অহেতুক এমন মিথ্যা উচ্চারণ আজকাল যেন দোষের কোনো বিষয়ই নয়। অথচ বলাবাহুল্য, মিথ্যা তো মিথ্যাই। তেমনি কেবল ইয়ার্কি করে বা লোক হাসানোর জন্যও অনেকে মিথ্যা বলে মজা পান। এটাও কিন্তু মিথ্যাই। খেয়ালি মনে কিংবা ফাজলামো করে কেউ যেমন কাউকে খুন করলে বা কোনো জিনিস ভেঙ্গে ফেললে তা অক্ষত থাকে না। ক্ষতি যা হবার তা হয়েই যায়। তেমনি মিথ্যাও যদি কেউ ঠাট্টাচ্ছলে বা ফাজলামো করে বলেন তিনিও ঠিক সে মিথ্যার গুনাহগার হন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য সদা অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি ঘুণাক্ষরেও মিথ্যা বলেন নি। তাঁর হাসি-কৌতুকও ছিল নির্মল ও অনিন্দ্য সত্যনির্ভর। এ প্রসঙ্গে সীরাতে রাসূল থেকে একটি চমৎকার ঘটনা উল্লেখের লোভ সংবরণ করতে পারছি না। হাদীসটি আমরা প্রায়ই আলোচনা করে থাকি। ঘটনাটি এমন :

أنَّ امرأةً عجوزًا جاءتْهُ تقولُ لَهُ : يا رسولَ اللهِ ادع اللهَ لي أنْ يدْخِلَني الجنةَ فقال لَها : يا أمَّ فلانٍ إِنَّ الجنَّةَ لا يدخلُها عجوزٌ وانزعجَتِ المرأةُ وبكَتْظنًّا منها أنها لن تدخلَ الجنةَ فلما رأى ذلِكَ منها بيَّنَ لها غرضَهُ أنَّ العجوزَ لَنْ تدخُلَ الجنَّةَ عجوزًا بل يُنشِئُها اللهُ خلقًا آخرَ فتدخلُها شابَّةً بكرًا وتَلَا عليها قولَ اللهِ تعالى : إِنَّا أَنشَأْناهُنَّ إِنشَاءً فَجَعَلْنَاهُنَّ أبْكًارًا عُرُبًا أُتْرَابًا .

‘একবার এক বুড়ি মা তাঁর কাছে এসে বললেন, আমার জন্য দো‘আ করুন যাতে আমি জান্নাতে যেতে পারি। (নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্মিত হাসি দিয়ে) বললেন, হে ওমুকের মা! জান্নাতে তো কোনো বুড়ি প্রবেশ করবে না। এ কথা শুনে বৃদ্ধা খুবই উদ্বিগ্ন হলেন, এমনকি কাঁদতে শুরু করলেন। তিনি ভাবলেন কখনোই বুঝি তার জান্নাতে যাওয়া হবে না। বৃদ্ধার অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হেসে) ব্যাখ্যা করে বললেন, কোনো বৃদ্ধ মহিলা বৃদ্ধাবস্থায় জান্নাতে যাবে না। বরং আল্লাহ তাদেরকে নতুন সৃষ্টিতে রূপান্তরিত করবেন। অতঃপর পূর্ণযৌবনা-কুমারী হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। অতঃপর তিনি তাঁকে আল-কুরআনুল কারীমের (নিম্নোক্ত) আয়াত তিলাওয়াত করে শোনালেন,

﴿ إِنَّآ أَنشَأۡنَٰهُنَّ إِنشَآءٗ ٣٥ فَجَعَلۡنَٰهُنَّ أَبۡكَارًا ٣٦ عُرُبًا أَتۡرَابٗا ٣٧ ﴾ [الواقعة: ٣٥،  ٣٧]

‘নিশ্চয় আমি তাদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করব। অতঃপর তাদেরকে বানাব কুমারী, সোহাগিনী ও সমবয়সী।’ {সূরা আল-ওয়াকিয়া, আয়াত : ৩৫-৩৭} [গায়াতুল মারাম : ৩৭৫][1]
ঠাট্টা-মজাক করেও মিথ্যা বলার অবকাশ নেই। একটি হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবধান করে বলেছেন,

«وَيْلٌ لِلَّذِي يُحَدِّثُ فَيَكْذِبُ لِيُضْحِكَ النَّاسَ مِنْهُ، وَيْلٌ لَهُ، وَيْلٌ لَهُ»

‘ওই ব্যক্তির জন্য কঠিন শাস্তি, কঠিন শাস্তি এবং কঠিন শাস্তি যে কেবল লোক হাসাতে মিথ্যে বলে।’ [আবূ দাউদ : ৪৯৯০][2]
শুধু শাস্তির ভয়ই দেখানো হয় নি; ঠাট্টাচ্ছলেও মিথ্যা পরিহার করলে তার জন্য শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের ঘোষণাও করা হয়েছে। যেমন আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ في رَبَضِ الْجَنّةِ لِمَنْ تَرَكَ المِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقاّ، وَبِبَيْتٍ في وَسَطِ الْجَنّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْكَذِبَ وَإِنْ كان مَازِحاً، وَبِبَيْتٍ في أعْلَى الْجَنّةِ لِمَنْ حَسّنَ خُلُقَهُ »

‘আমি ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের আশপাশে কোনো গৃহের জামিন হব যে উপযুক্ত ও সঠিক হবার পরও (বিপক্ষের) তর্ক ছেড়ে দেয়, আর ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যস্থলে কোনো গৃহের জামিন হব যে ঠাট্টাচ্ছলেও মিথ্যে পরিহার করে এবং জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে কোনো গৃহের জামিন হব যে তার চরিত্রকে সুন্দর বানায়।’ [আবূ দাঊদ : ৪৮০০][3]
আজকাল প্রায়শই মোবাইলে কথা বলার সময়ও দেখা যায় অনেককে অহেতুক মিথ্যা বলতে। বাসায় কথা বলার সময় অনেকে নিজের অবস্থান থেকে একটু বাড়িয়ে আরেকটু সামনের কথা বলেন। অথচ সঠিক জায়গার কথা বললে তার তেমন কোনো ক্ষতি বৃদ্ধি হয় না। যানবাহনে প্রায়ই দেখি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে অনেক ভদ্রলোক দিব্যি সবার সামনে মিথ্যা বলে যাচ্ছেন। অফিসের কর্তাকে ধোঁকা দিয়ে জনারণ্যে অসত্য বলছেন! আছেন এক জায়গায় আর বলছেন তার থেকে কয়েক মাইল এগিয়ে।
শিশুদের সঙ্গেও আমরা মাঝেমধ্যে অকারণে মিথ্যে বলি। যেমন হাতে কিছু না নিয়েও কিছু আছে বলে সোনামনিকে কাছে টানার চেষ্টা করা ইত্যাদি। অথচ এটিও মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত। আবদুল্লাহ ইবন ‘আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

دَعَتْنِي أُمِّي يَوْمًا وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاعِدٌ فِي بَيْتِنَا، فَقَالَتْ: هَا تَعَالَ أُعْطِيكَ، فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَمَا أَرَدْتِ أَنْ تُعْطِيهِ؟» قَالَتْ: أُعْطِيهِ تَمْرًا، فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَا إِنَّكِ لَوْ لَمْ تُعْطِهِ شَيْئًا كُتِبَتْ عَلَيْكِ كِذْبَةٌ»

‘একদা আমার মা আমাকে ডাকতে লাগলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বাসায় বসা ছিলেন। (তিনি আমাকে কোলে নিতে চাইছিলেন আর আমি যেতে চাইছিলাম না।) এমতাবস্থায় তিনি বললেন, কাছে এসো, তোমাকে একটি জিনিস দেব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে বললেন, সত্যিই কি তুমি তাকে কিছু দেবে নাকি এমনিই তাকে কাছে নেবার জন্য বলছ? মা বললেন, আমার খেজুর দেবার ইচ্ছা আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তোমার খেজুর দেবার ইচ্ছা না থাকত এবং শুধুমাত্র তাকে আহ্বান করাই উদ্দেশ্য হত তাহলে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যা বলার গুনাহ লেখা হত। [আবূ দাঊদ : ৪৯৯১]
পবিত্র ধর্ম ইসলামে সর্বদা সত্য বলা এবং মিথ্যা বর্জনের শিক্ষা দেয়া হয়েছে। মিথ্যার নিন্দা করা হয়েছে বহু আয়াত এবং হাদীসে। বিভিন্নভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে মিথ্যা বলতে। উৎসাহিত করা হয়েছে সত্য উচ্চারণে। বাংলাই প্রবাদই রয়েছে মিথ্যা মানুষের বিপদ ডেকে আনে। আমাদের মহান রব ইরশাদ করেন,

﴿ وَيۡلٞ يَوۡمَئِذٖ لِّلۡمُكَذِّبِينَ ١٠ ﴾ [المطففين: ١٠]

‘সেদিন ধ্বংস মিথ্যাবাদীদের (সত্য তথা ইসলামকে অস্বীকারকারীদের) জন্য।’ {সূরা আল-মুতাফফিফীন, আয়াত : ১০}
মিথ্যাবাদীদের তীব্র ভর্ৎসনা করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿ إِنَّمَا يَفۡتَرِي ٱلۡكَذِبَ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِ‍َٔايَٰتِ ٱللَّهِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰذِبُونَ ١٠٥ ﴾ [النحل: ١٠٥]

‘একমাত্র তারাই মিথ্যা রটায়, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে না। আর তারাই মিথ্যাবাদী।’ {সূরা আন-নাহল, আয়াত : ১০৫}
যাচ্ছে তাই সত্য-মিথ্যা বলতে আল্লাহ বারণ করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে,

﴿ وَلَا تَقُولُواْ لِمَا تَصِفُ أَلۡسِنَتُكُمُ ٱلۡكَذِبَ هَٰذَا حَلَٰلٞ وَهَٰذَا حَرَامٞ لِّتَفۡتَرُواْ عَلَى ٱللَّهِ ٱلۡكَذِبَۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَفۡتَرُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلۡكَذِبَ لَا يُفۡلِحُونَ ١١٦ ﴾ [النحل: ١١٦]

‘আর তোমাদের জিহ্বা দ্বারা বানানো মিথ্যার উপর নির্ভর করে বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম, আল্লাহর উপর মিথ্যা রটানোর জন্য। নিশ্চয় যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটায়, তারা সফল হবে না।’ {সূরা আন-নাহল, আয়াত : ১১৬}
হাদীসে মিথ্যা বলার স্বভাবকে মুনাফিকের আলামত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

«آيَةُ المُنَافِقِ ثَلاَثٌ: إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ »

‘মুনাফিকের আলামত তিনটি : যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, আমানত রাখলে খেয়ানত করে এবং প্রতিশ্রুতি দিলে তা ভঙ্গ করে। [সহীহ বুখারী : ২৫৬২]
মিথ্যা বলা শুধু মন্দ স্বভাবই নয়; বরং তা গুনাহ ও অশ্লীলতার দিকে নিয়ে যায়। যেমন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ، فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ، وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ، وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيقًا، وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ، فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ، وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ، وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ كَذَّابًا»

‘সত্য বলাকে নিজের ওপর অপরিহার্য করে নাও। কেননা সত্যবাদীতা নেকীর দিকে আর নেকী জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। যে মানুষ সত্য বলে আর এ জন্যে চেষ্টা করতে থাকে, এতে সে আল্লাহ তা‘আলার কাছে সত্যবাদীদের তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। আর মিথ্যা থেকে বিরত থাক, কেননা মিথ্যা গুনাহ ও অশ্লীলতার দিকে আর গুনাহ এবং অশ্লীলতা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। যে মানুষ মিথ্যা বলতে থাকে আর এ দিকে আল্লাহ্’র কাছে তার নাম মিথ্যাবাদীদের তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। [বুখারী : ৬০৯৪; মুসলিম : ২৬০৭]
সবচে বড় গুনাহগুলোর অন্যতম হলো মিথ্যা বলা। যেমন আবদুর রহমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

«أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الكَبَائِرِ؟» ثَلاَثًا، قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ – وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِئًا فَقَالَ – أَلاَ وَقَوْلُ الزُّورِ» ، قَالَ: فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا: لَيْتَهُ سَكَتَ

‘আমি কি তোমাকের সবচে বড় কবীরা গুনাহের খবর দেব না?’ তিনি তিনবার উচ্চারণ করলেন প্রশ্নটি। সাহাবীরা বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, পিতা-পাতার অবাধ্য হওয়া –তিনি বসা অবস্থা থেকে হেলান দিয়ে বললেন- এবং মিথ্যা কথা বলা। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি কথাটির পুনরাবৃত্তি করতেই থাকলেন, এমনকি মনে মনে বললাম, ইস তিনি যদি নীরব হয়ে যেতেন! [বুখারী : ২৬৫৪; মুসলিম : ৮৮]
আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি ঈমানদারকে মিথ্যা থেকে বেঁচে চলার তাওফীক দান করুন। সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করুন সত্যবাদীদের কাতারে। আমীন।


[1]. শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন আস-সিলসিলাতুস সাহীহা : ২৯৮৭।
[2]. শায়খ আলবানী হাসান বলেছেন।
[3]. শায়খ আলবানী হাসান বলেছেন।

Collected From : Quraner Alo

অমুসলিমদেরকে প্রথমে সম্ভাষণ জানানো :

অমুসলিমদেরকে প্রথমে সম্ভাষণ জানানো :



অমুসলিমদেরকে প্রথমে সম্ভাষণ জানানো মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয়। নবী (সা) বলেছেন,
“ইহুদী কিংবা খ্রিস্টানদের প্রথমে তোমরা সালাম জানাবে না।” [সহীহ মুসলিম, সালাম অধ্যায়, হাদীস নং ২১৬৭]
তিনি (সা) আরও বলেছেন,
“যদি আহলে কিতাবদের কেউ সালামের (আস্‌সালামু ‘আলাইকুম) মাধ্যমে তোমাদের অভিবাদন জানায়, তাহলে বোলো, ‘ওয়া ‘আলাইকুম।’” [আল-বুখারি, হাদীস নং ৫৯০১; মুসলিম, হাদীস নং ২১৬৫]
অতএব, নিজে থেকে প্রথমেই কোনো কাফিরকে সালাম জানানো মুসলিমের উচিত নয়। তবে কোন কাফের, ইহুদী বা খ্রিস্টান যদি কোনো মুসলিমকে সালাম জানায়, তাহলে রাসূলের (সা) নির্দেশ অনুযায়ী, “ওয়া ‘আলাইকুম” বলে উত্তর দিতে হবে।
ঘুমানো এবং জাগ্রত হওয়ার আদব

ঘুমানো এবং জাগ্রত হওয়ার আদব

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

লিখেছেনঃ  আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান   
165
ঘুম আল্লাহ তাআলার একটি বিশাল নেয়ামত , এর মাধ্যমে তিনি নিজ বান্দাদের উপর বিরাট অনুগ্রহ করেছেন। এবং তাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। আর নেয়ামতের দাবি হল শুকরিয়া আদায় করা তথা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন : 

وَمِنْ رَحْمَتِهِ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِنْ فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ৭৩ (القصص ৭৩)

তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন যাতে তোমরা রাত্রে বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তার অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।  [আল কাসাস : ৭৩]

وقال سبحانه وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا.  النبأ : ৯

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। [আন নাবা : ৯]
দিনের ক্লান্তিকর চলাফেরার পর রাত্রে শরীরের প্রশান্তি শরীর সুস্থ থাকাকে সাহায্য করে।অনুরূপ ভাবে শরীরের বর্ধন এবং কর্ম চাঞ্চল্যতেও সাহায্য করে। যাতে করে ঐ দায়িত্ব পালন করতে পারে যার জন্য আল্লাহ তাআলা তাকে সৃষ্টি করেছেন।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে যা কিছু অতি জরুরী ঘুম তার অন্যতম। মুমিন বান্দা যদি ঘুমের মাধ্যমে দেহ ও মনকে আরাম দেওয়ার নিয়ত করে , যাতে করে সে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের বিষয়ে আরো দৃঢ় হতে পারে। অতঃপর ঘুমের সমস্ত সুন্নত ও শরয়ী আদব পরিপূর্ণ রূপে পালন করার চেষ্টা করে , তবে তার ঘুম এবাদত হিসাবে পরিগণিত হবে এবং সে পুণ্য লাভ করবে।
সাহাবী মুআয বিন জাবাল রা. বলতেন :―

أما أنا فأنام وأقوم، فأحتسب نومتي كما أحتسب قومتي.البخاري (৩৯৯৮)

আর আমি (রাতে) ঘুমাই এবং জাগ্রত হয়ে সালাত আদায় করি, জাগ্রত থেকে সালাত আদায়ের মাধ্যমে যে ভাবে ছাওয়াবের আশা করি ঠিক তেমনি করে ঘুমানোর মাধ্যমেও ছাওয়াবের আশা করি । [বোখারি : ৩৯৯৮]

ইবনে হাজার র. বলেন এর অর্থ হল: 

قال ابن حجر رحمه اللّه: معناه أنه يطلب الثواب في الراحة كما يطلبه في التعب،

তিনি আরামের ভিতর পুণ্য আশা করতেন যেমন কষ্টের ভিতর আশা করতেন।
কেননা আরামের উদ্দেশ্য যদি এবাদত করার জন্য সাহায্য সঞ্চয় করা হয়, তবে সে আরামের দ্বারা পুণ্য হবে। এখানে মুয়ায ইবনে জাবাল রা.-এর জাগ্রত হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হল রাতের নামায।
(১) অধিক রাত্রি জাগরণ না করে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া মোস্তাহাব ―
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামাযের পূর্বে ঘুমানো এবং নামাযের পর অহেতুক গল্প-গুজব করাকে খুব অপছন্দ করতেন । [বোখারি : ৫১৪]
কিন্তু ভাল ও নেক কাজের জন্য এশার পরে জাগ্রত থাকাতে কোন ক্ষতি নেই। যেমন মেহমানের সাথে কথা বলা অথবা ইলমী আলোচনা করা অথবা পরিবারকে সময় দেওয়া ইত্যাদি। মোটকথা, যে জাগ্রত থাকা কোন ক্ষতির কারণ হবে না যেমন ফজরের নামায নষ্ট হয়ে যাওয়া, সে জাগ্রত থাকাতে কোন ক্ষতি নেই।
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপরকারিতা 
  • ক) সুন্নতের অনুসরণ।
  • খ) শরীরকে আরাম দেওয়া, কেননা দিনের ঘুম রাত্রের ঘুমের ঘাটতি পূরণ করতে পারে না।
  • গ) ফজরের নামাযের জন্য খুব সহজে এবং পূর্ণ শক্তি ও চাঞ্চল্যতার সাথে জাগ্রত হওয়া যায়।
  • ঘ) তাহাজ্জুদের নামাযের জন্য শেষ রাতে জাগ্রত হতে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য এটি বড় সহায়ক ।
(২) প্রত্যেক মুসলমানকে সব সময় ওযু অবস্থায়ই ঘুমাতে চেষ্টা করা উচিত। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারা ইবনে আযেব রা.-কে বলেছিলেন―

إذا أخذت مضجعك فتوضأ وضوءك للصلاة. مسلم (৪৮৮৪)

যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাযের ওযুর মত ওযু করবে। [মুসলিম : ৪৮৮৪]
(৩) ডানদিকে পাশ ফিরে ঘুমাবে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :― 

ثم أضطجع على شقك الأيمن.

অতঃপর ডান কাত হয়ে ঘুমাও।
(৪) উপুড় হয়ে ঘুমানো মাকরূহ। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :― 

إنها ضجعة يبغضها الله عز وجل.

এটি এমন শয়ন, যাকে আল্লাহ তাআলা খুব অপছন্দ করেন।
(৫) ঘুমানোর সময় হাদীসে বর্ণিত আযকার ও দোয়া থেকে সাধ্যানুযায়ী পড়ার চেষ্টা করবে। যিকির তথা আল্লাহর নাম নেয়া ব্যতীত ঘুমানো মাকরূহ। 
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত―

ومن اضطجع مضجعا لم يذكر الله تعالى فيه إلا كان عليه من الله تِرَة يوم القيامة أبو داود (৪৪০০)

যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকির ছাড়া শুয়ে পড়বে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আক্ষেপের বিষয় হবে। [আবু দাউদ : ৪৪০০]
হাদীসে বর্ণিত (ঘুমানোর সময়ের) কিছু দোয়া:~
ক) আয়াতুল কুরসী পড়া। 

عن أبي هريرة قال: وكّلني رسول الله صلى الله عليه وسلم بحفظ زكاة رمضان، فأتاني آت فجعل يحثو من الطعام… وذكر الحديث، وفيه أن هذا الآتي قال له: إذا أويت إلى فراشك فاقرأ آية الكرسي، فإنه لن يزال معك من الله تعالى حافظ، ولا يقربك شيطان حتى تصبح، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: صدقك، وهو كذوب، ذاك شيطان.البخاري (৩০৩৩)

অর্থাৎ আবু হুরাইরা রা. বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমযানের ফিতরা সংরক্ষণের দায়িত্ব দিলেন। কোন এক আগন্তুক আমার কাছে আসল, এবং অঞ্জলি ভরে খাবার (চুরি) সংগ্রহ করতে লাগল।… এরপর পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। -তাতে আছে- আগন্তুক তাকে বলল : তুমি যখন তোমার বিছানায় যাবে তো আয়াতুল কুরসী পড়বে, কেননা এর মাধ্যমে সর্বক্ষণ তোমার সাথে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একজন হেফাজতকরী থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে ঘেঁসতে পারবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমাকে সত্য বলেছে অথচ সে বড় মিথ্যাবাদী। সে হচ্ছে শয়তান।[বোখারি : ৩০৩৩]
খ) সূরা এখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পড়া। 
আয়েশা রা. বর্ণনা করেন:

أن النبي صلى الله عليه وسلم كان إذا أوى إلى فراشه- كل ليلة – جمع كفيه ثم نفث فيهما، وقرأ فيهما قل هو الله أحد و قل أعوذ برب الفلق و قل أعوذ برب الناس، ثم مسح بهما ما استطاع من جسده، بدأ بهما على رأسه ووجهه وما أقبل من جسده، يفعل ذلك ثلاث مرات. . الترمذي (৩৩২৪)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রতি রাত্রিতে নিজ বিছানায় যেতেন দুই হাতের কবজি পর্যন্ত একত্রিত করতেন অতঃপর তারমাঝে ফু দিতেন এবং সূরা এখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়তেন । অতঃপর দুই হাত যথা সম্ভব সমস্ত শরীরে মলে দিতেন। মাথা ,চেহারা এবং শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। এরূপ পরপর তিনবার করতেন।  [তিরমিজি : ৩৩২৪]

গ) اللهم باسمك أموت وأحيا দোআটি পড়া।
অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনার নামে মৃত্যবরণ করলাম এবং আপনার নামেই জীবিত হব।
ঘ) নিম্নোক্ত দোআটি পড়া।

اللهم أسلمت نفسي إليك، وفوّضت أمري إليك، وألجأت ظهري إليك، رغبة ورهبة إليك، لا ملجأ ولا مَنجى منك إلا إليك، آمنت بكتابك الذي أنزلت، ونبيّك الذي أرسلت.البخاري (৫৮৩৬)

অর্থাৎ, হে আল্লাহ আমি নিজেকে আপনার কাছে সঁপে দিয়েছি। আমার বিষয় আপনার কাছে সোপর্দ করেছি। আমার পিঠ আপনার সাহায্যে দিয়েছি আপনার প্রতি আশা এবং ভয় নিয়ে, আশ্রয় নেয়ার ও আপনার শাস্তি থেকে বাঁচার মত জায়গা আপনি ছাড়া আর কেউ নেই। আমি ঈমান এনেছি আপনার অবতীর্ণ কিতাবের প্রতি এবং আপনার প্রেরিত নবীর প্রতি।    [বোখারি : ৫৮৩৬]
(৬) ঘুমের মাঝে অনাকাংখীত ও অপছন্দনীয় কিছু দেখলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচটি কাজ করতে বলেছেন।
  • ক) বাম দিকে তিন বার থুতু ফেলবে।
  • খ) أعوذ بالله من الشيطان الرجيم বলে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাইবে।
  • গ) এ স্বপ্নের কথা কাউকে বলবে না।
  • ঘ) যে কাতে শোয়া ছিল সে কাত থেকে ঘুরে শোবে অর্থাৎ পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোবে।
  • ঙ) নামাজে দাঁড়িয়ে যাবে।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম র. এ পাঁচটি কাজ উল্লেখ করে বলেন : যে এই কাজগুলো করবে খারাপ স্বপ্ন তার ক্ষতি করতে পারবে না বরং এ কাজ তার ক্ষতি দূর করে দেবে।
(৭) সন্তানদের বয়স দশ বছর হয়ে গেলে তাদের বিছানা আলাদা করে দেয়া একান্ত আবশ্যক।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
مروا أولادكم بالصلاة وهم أبناء سبع سنين، واضربوهم عليها وهم أبناء عشر، وفرّقوا بينهم في المضاجعأبوداود ( ৪১৮)
অর্থাৎ তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে নামাযের আদেশ দাও যখন তাদের বয়স সাত বৎসর হবে এবং এর জন্য তাদেরকে শাস্তি দাও যখন তাদের বয়স দশ বৎসর হবে এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও। [আবু দাউদ : ৪১৮]

(৮) মুসলমান অবশ্যই সর্বদা ফজরের নামাযের পূর্বে জাগ্রত হবে যেন নামায সময় মত জামাতের সাথে ঠিকভাবে আদায় করতে পারে। এ ব্যাপারে চেষ্টা করা এবং এতে সহায়তাকারী উপকরণাদি গ্রহন করা তার জন্য ওয়াজিব।

سئل النبي عن رجل نام حتى أصبَح؟  ্ذاك رجل بال الشيطان في أذنيهالنسائي (১৫৯০)

এক ব্যক্তি ফজর পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিল তার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হল। রাসূল বললেন : ঐ ব্যক্তির কর্ণ-দ্বয়ে শয়তান প্রস্রাব করে দিয়েছে।     [নাসায়ী : ১৫৯০]
(৯) মুসলমান ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর নিম্নোক্ত দোয়া পড়া মোস্তাহাব:

الحمد لله الذي أحيانا بعد ما أماتنا وإليه النشور.

الحمد لله الذي ردّ علي روحي وعافاني في جسدي، وأذِن لي بذكره،

সকল প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে মৃত্যু দেয়ার পর জীবিত করে দিয়েছেন এবং তার কাছেই ফিরে যাব। 
সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লা¬র জন্য যিনি আমার আত্মাকে আমার নিকট ফিরিয়ে দিয়েছেন , আমার শরীরেকে সুস্থ রেখেছেন এবং আমাকে তার স্মরণের অনুমতি দিয়েছেন।
অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুকরণে মিসওয়াক করবে।

মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার আদব

মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার আদব

মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার আদব
মসজিদ আল্লাহর ঘর। এ ঘরে প্রবেশের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ আদব। ইবাদাত-বন্দেগি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বচ্ছ মন, সাদা দিল না হয়ে মসজিদে না গেলে ইবাদতে মন বসে না। সুতরাং মসজিদে প্রবেশর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আদব ও দোয়া। জাগো নিউজে তা তুলে ধরা হলো-
বাসা-বাড়ি, আবাসস্থল থেকে অজু-গোসলের মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে আল্লাহর প্রতি বিনয় ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহব্বতকে বুকে ধারণ করে তাঁর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করতে করতে ধীরে ধীরে মসজিদে আসা।

মসজিদে প্রবেশর আদব এবং দোয়া
০১. প্রথমেই ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা।
০২. প্রবেশের পর এ দোয়া পড়া-
اَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَ بِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَ سُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ – بِسْمِ اللهِ وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلَي رَسُوْلِ اللهِ اَلّلهُمَّ غْفِرْلِي وَ  افْتَحْ لِيْ أَبْوَاب رَحْمَتِكَ-
উচ্চারণ : আউযুবিল্লাহিল আযিম ওয়া বিওয়াঝহিহিল কারিম ওয়া সুলতানিহিল ক্বাদিমি মিনাশ শায়তানির রাঝিম। বিসমিল্লাহি ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা রাসুলিল্লাহ, আল্লাহুম্মাগফিরলি জুনুবি, ওয়াফ-তাহলি আবওয়াবা রহমাতিকা। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
অর্থ : ‘আমি মহান আল্লাহর, তাঁর সম্মানিত চেহারার এবং তাঁর চিরন্তন কর্তৃত্বের মাধ্যমে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (আবু দাউদ) আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। সালাত ও সালাম রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোনাহগুলো ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন।’ (ইবনে মাজা)
অতঃপর করণীয়
তখন যদি কোনো ফরজ ওয়াক্তের জামাত দাঁড়িয়ে যায় তবে সরাসরি জামাতে অংশ গ্রহণ করা, নয়তো বসার আগেই দুই রাকাআত ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ নামাজ পড়া। হজরত কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, `তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে, তখন সে যেন দুই রাকাআত সালাত পড়ে তবেই বসে।’ (বুখারি)
প্রকাশ থাকে যে...
ফরজ সালাত প্রথম কাতারে পড়া উত্তম; কেননা রাসুল সাল্লল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, `পুরুষদের সবচেয়ে উত্তম কাতার হলো প্রথমটি, আর সবচেয়ে আদনা কাতার হলো শেষটি।’ (মুসলিম)

বের হওয়ার আদব ও দোয়া
০১. বাম পা দিয়ে বের হওয়া
০২. ডান পায়ে জুতা পরিধান করা
০৩. উক্ত দোয়াটি পড়া-
উচ্চারণ- বিসমিল্লাহি ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা রাসুলিল্লাহ, আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিক। আল্লহুম্মা’সিমনি মিনাশ্ শায়ত্ব-নির রাঝিম। (ইবনু মাজাহ, আবু দাউদ, মিশকাত)
অর্থ : আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। সালাত ও সালাম রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর। হে আল্লাহ তোমার নিকট অনুগ্রহ চাই। হে আল্লাহ বিতাড়িত শয়তানের ধোকা থেকে আশ্রয় চাই।

পরিশেষে...
আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককে মসজিদে প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার আদব রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে তাওফিক দান করুন। আমিন।